চউক-প্রারম্ভিকঃ
"চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ" চট্রগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য একটি সংবিধিবদ্ধ পরিকল্পনা এবং উন্নয়ন প্রণয়নমূলক কর্তৃপক্ষ, যা ১৯৫৯ সালে চউক অধ্যাদেশ-১৯৫৯ এর আলোকে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যার মূল লক্ষ্য ছিল চট্টগ্রাম শহর ও এর আওতাধীন এলাকার পরিকল্পিত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়ন। ভৌগলিক ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের কারনে চট্টগ্রামের উন্নয়ন বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রাচীণ এই নগরীর নগরায়রনের ক্রমবর্ধমান ধারার প্রতি দৃষ্টি রেখে নগরায়রনের ধারাকে পরিকল্পিত এবং টেকসই করার লক্ষে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) কাজ করে যাচ্ছে।
চউক এর প্রধান ভূমিকাঃ-
পরিকল্পিত উন্নয়ন ও অপরিকল্পিত উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ
উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা
উন্নয়নের অনুমোদন
চউকের মূল কাজ সমূহ নিম্নরূপঃ-
চট্টগ্রাম শহর ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য একটি উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা তৈরী করা এবং তার নিয়মিত উন্নয়ন
চট্টগ্রাম শহরের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন। এই পরিকল্পনার আওতায় রয়েছে নতুন রাস্তা নির্মাণ, শহরের প্রধান সড়ক সমূহ প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন, বানিজ্যিক বিতান নির্মাণ, শিষ্প, আবাসিক এলাকার উন্নয়ন এবং বানিজ্যিক প্লটসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় শহর কেন্দ্রীক উন্নয়ন।
সরকার অনুমোদিত চট্টগ্রাম শহরের মহাপরিকল্পনা (Master Plan) এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অধ্যাদেশের আলোকে স্ট্রাকচার প্ল্যান অনুযায়ী পরিকল্পনা নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন।
বাংলাদেশ ইমারত নির্মাণ বিধিমালা- ১৯৫২ ও তৎপরবর্তী সংশোধনী অনুযায়ী অপরিকল্পিত উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ।
চউক নিয়ন্ত্রিত এলাকাঃ-
স্ট্রাকচার প্ল্যান-১৯৯৫ অনুযায়ী ১১৫২ বর্গ কিঃ মিঃ
চউক সীমানাঃ
উত্তরে : সীতাকুন্ডের বাঁশবাড়ীয়া
দক্ষিণে: সাঙ্গু নদী
পূর্বে: রাঙ্গুনীয়ার ইছাখালী
পশ্চিমে: বঙ্গোপসাগর
চট্টগাম মেট্রোপলিটন মাস্টার প্ল্যানঃ-
সর্বপ্রথম ১৯৬১ সালে চট্টগ্রাম শহরের মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। পরবর্তীতে UNDP ও UNCHS এর আর্থিক ও কারিগরী সহায়তায় ১৯৯৫ সালে মহাপরিকল্পনা প্রনয়ণ করা হয়, যা ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হয়।
উল্লেখিত মহাপরিকল্পনার আওতায় নিম্নলিখিত পরিকল্পনা সমূহ প্রস্তুত করা হয়ঃ-
স্ট্রাকচার প্ল্যান (১৯৯৫-২০১৫)
আরবান ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান (১৯৯৫-২০০৫)
ট্রান্সপরটেশন মাস্টার প্ল্যান (১৯৯৫-২০১৫)
ড্রেনেইজ মাস্টার প্ল্যান (১৯৯৫-২০১৫)
পরবর্তীতে উক্ত মাস্টার প্ল্যান -১৯৯৫ এর নির্দেশনা অনুযায়ী ২০০৭ সালে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা ( Detailed Area Plan ) প্রস্তুত করা হয়।
স্ট্রাকচার প্ল্যান (১৯৯৫-২০১৫)
প্রধান বৈশিষ্ট্যঃ
চউক নিয়ন্ত্রিত ১১৫২ বর্গ কিঃ মিঃ এলাকার কৈৗশলগত পরিকল্পনা
ভূমি ব্যবহার সংক্রান্ত নির্দেশনা
আঞ্চলিক গ্রোথ সেন্টার সমূহের উন্নয়ন সংক্রান্ত নির্দেশনা
জনসংখ্যা, অর্থনীতি, যাতায়াত, ভূমি উন্নয়ন, আবাসন, ইত্যাদি ক্ষেত্রে সর্বমোট ৭৬টি কৈৗশলগত নির্দেশনা
আরবান ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান(১৯৯৫-২০০৫)
প্রধান বৈশিষ্ট্যঃ
শহরের ২৫৯ বর্গ কিঃ মিঃ এলাকার উন্নয়ন সংক্রান্ত নির্দেশনা
ভূমি ব্যবহার সংক্রান্ত অঞ্চল বিভাজন
ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (সরকারী অনুদানে)
প্রধান বৈশিষ্ট্যঃ
গণমূখী পরিকল্পনা
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ
উন্নয়ন ও পরিকল্পনায় GIS ডাটাবেইজ এর ব্যবহার
নির্দিষ্ট এলাকা সমূহের বিশদ পরিকল্পনা
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য মন্ডিত স্থানসমূহ যেমন, পাহাড়, উন্মুক্ত স্থান, জলাশয় /জলাধার, ইত্যাদি চিহ্নিত করণ ও রক্ষণাবেক্ষণ
বিবিধ ভূমি ব্যবহার যেমন, আবাসিক/ বানিজ্যিক/ শিল্প সহ সড়ক, ড্রেনেইজ, ইউটিলিটিজ ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত উন্নয়ন পরিকল্পনা
চউক কর্তৃক গৃহিত /বাস্তবায়িত/ বাস্তবায়নাধীন খাত ভিত্তিক বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনার সার-সংক্ষেপঃ
সড়ক উন্নয়ন ও যানজট নিরসন:
ক্রমবর্ধমান যানজট নিরসনের জন্য প্রাইমারী সেকেন্ডারী, টারশিয়ারী রোড নির্মাণ যেমন সিডিএ এভিনিউ, চিটাগং আউটার রিং রোড, সদরঘাট -ফিরিঙ্গিবাজার রোড, নবাব সিরাজদ্দৌল্লা রোড ইত্যাদি।
আবাসন সমস্যা নিরসন:
চউক চট্টগ্রামের আবাসন সমস্যা নিরসনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে, ইতোমধ্যে ৭০০০ এর অধিক প্লট বিভিন্ন পেশা/শ্রেণীর জনগণের মাঝে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। এ সকল আবাসিক এলাকায় উন্মুক্ত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক মানের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, যেমন এপোলো হসপিটাল, দিল্লী পাবলিক স্কুল ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানকে তাদের কার্যক্রম শুরু করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এছাড়াও আবাসিক সমস্যা নিরসন এবং ব্যবসা-বানিজ্যের প্রসারনের জন্য চউক ইতোমধ্যে বেশ কিছু গরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে যেমন: বিশতলা বিশিষ্ট আবাসিক কাম বানিজ্যিক ভবন নির্মাণ (কাজিরদেউরী কাচা বাজার এলাকা), ইএগঊঅ ও ঈউঅ এর যৌথ উদ্যোগে গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য ডরমেটরী নির্মাণ এবং স্বল্প আয়ের জনসাধারণের জন্য ২৫, ২২, ২০ তলা বিশিষ্ট তিনটি (প্রায় ১৯৬ টি ফ্ল্যাট) আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।
বানিজ্যিক ও শিল্প এলাকার উন্নয়ন:
বানিজ্যিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য চউক ইতোমধ্যে বেশ কিছু বানিজ্যিক শিল্প এলাকার উন্নয়ন সাধন করেছে। যেমন, পাঠানটুলী মার্কেট, কর্ণফুলী মার্কেট, নিউমার্কেট, ষোলশহর মার্কেট, কালুরঘাট শিল্প এলাকা, ফৌজদারহাট শিল্প এলাকা, ইত্যাদি।
পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন:
চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে পর্যটন শিল্পের বিকাশ সাধনে চউক ইতোমধ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। যেমন- বাটার ফ্লাই পার্ক, নান্দনিক ডিসি হিল পার্ক, সি আর বি ল্যান্ডস্কেপ উন্নয়ন।
অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অংশীদারী ভিত্তিক চউক পরিকল্পনাঃ
অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও জাতিসংঘের গউএ বাস্তবায়নকল্পে চউক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্ত-বায়নের মাধ্যমে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী চউক নিজস্ব অর্থায়নের পাশাপাশি সরকারী অর্থায়ন, চচচ, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (যেমন- জাইকা) ইত্যাদির মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।